একটা উদাহরন দেখা যাক। বিবিসি জানালা নামে একটি ব্যবস্থা চালু করেছে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইংরেজি শেখার। শুরুর প্রথম ৬ দিনে অন্তত ৪ লক্ষ মানুষ ফোন করেছে নিজের টাকা খরচ করে। এর ব্যাখ্যা কি ?
প্রথমত, মানুষ শিখতে চায়। নিজের টাকা খরচ করে হলেও। দ্বিতীয়ত, ইংরেজি শেখাকে প্রয়োজনীয় মনে করে যা পেশাগত জীবনে কাজে লাগবে বলে মনে করা হয়। তৃতীয়ত জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ইংরেজি শেখাতে ব্যর্থ। চতুর্থত, এই লক্ষ লক্ষ মানুষ জানে না তাদের পেশা কি হবে, সেখানে কোন যোগ্যতা প্রয়োজন হবে। বড় একটা অংশের মধ্যে অন্য দেশে যাওয়ার চিন্তা কাজ করে, বাকীদের ধারনা ইউরোপিয়ান-আমেরিকানদের মত কেতা রপ্ত না করায় তার ভাল চাকরী জুটছে না। ইংরেজি একমাত্র বিষয় যা চাকরী দিতে পারে এই ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে ছুটছে।
একথার সাথে সবাই একমত হবেন ধরে নিচ্ছি না। বরং যুক্তি হিসেবে এটুকু বলতে পারি, আপনি যে দেশ থেকেই জাপানে যান না কেন, কথা বলার জন্য জাপানীজ শিখতে হবে। তারা ইংরেজি শেখা প্রয়োজন মনে করে না। ইংরেজির কারনে তাদের সামান্যতম সমস্যার কথা কখনও শোনা যায়নি। দেশ হিসেবে বিশ্বে তাদের অবস্থান আমেরিকার পরই। পারমানবিক বোমার শিকার হওয়া একমাত্র দেশ হয়েও।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথায় আশা যাক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে যদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার বুঝানো হয় তাহলে এজন্য প্রয়োজন কম্পিউটার বিষয়ক জ্ঞান। এবং অভিজ্ঞতা। একটি দিক অবশ্যই কম্পিউটার সহজলভ্য করা, মানুষের হাতে পৌছে দেয়া। সেকাজ অনেকদুর এগিয়ে গেছে। এই দুর্মুল্যের বাজারেও ২০ হাজার টাকার নতুন কম্পিউটার কেনা যায়। এরচেয়ে বেশি আশা করা সম্ভবত খুব বেশি। কাজেই এপ্রসংগ বাদ দেয়া যেতে পারে।
যা বাকি থাকে তা হল কম্পিউটারকে কাজে লাগানো। যারা ছাত্র তাদের বিষয়ও এখানে বাদ দেয়া যেতে পারে। তারা কি শিখবে, কতটুকু শিখবে, কেন শিখবে, কোথায় ব্যবহার করবে সেটা ঠিক করা এবং কাজে লাগানোর দায়িত্ব সরকার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিস্ঠানের। সমাজে, সাধারন মানুষের কাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে এই বক্তব্য সীমাবদ্ধ।
লক্ষ লক্ষ মানুষ একে পেশা হিসেবে নিতে চান। এবং সেটা প্রয়োজনও। সমাজের সব যায়গায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবেন আর সফটওয়্যার জানা জনবল প্রয়োজন হবে না এটা মনে করা পাগলামি।
তাহলে, একজন ব্যক্তি, যিনি এই পেশায় আসতে চান তিনি সফটওয়্যার (অথবা হার্ডওয়্যার) শিখবেন, কাজ করবেন, দক্ষতা বাড়াবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিভাবে ?
যদি প্রোগ্রামার হিসেবে চাকরী খুজতে চান জিজ্ঞেস করা হবে আপনার অভিজ্ঞতা কতটুকু। কত বছরের। কোন প্রোগ্রাম তৈরী করেছেন। অন্তত ৫ বছরের বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে অমুক চাকরীর জন্য যোগাযোগ করবেন না। তমুক চাকরীর জন্য ১০ বছর।
কাজেই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আপনার সামনে পথ থাকে নিজের টাকা খরচ করে ৫ বছর, ১০ বছর প্রোগ্রাম তৈরী করে যাওয়া। বিবিসির মত কেউ বিনাটাকায় এই সুযোগ করে দিচ্ছে না। যদি সেটা করেও, আপনার সেই অভিজ্ঞতা কতটুকু বাস্তবসম্মত, আপনার কাজ কতটা ত্রুটিমুক্ত জানবেন কিভাবে ?
জানার পদ্ধতি একটাই, একজন ব্যবসায়ীকে বলা আপনার হিসেব রাখার জন্য প্রোগ্রাম আমি তৈরী করে দেব। আমাকে লক্ষ টাকা দেয়ার প্রয়োজন নেই, আমার খরচের টাকাটুকু দেবেন। তারপর দেখতে শুরু করবেন সফটওয়্যার তৈরী এবং বাস্তবে সেটা ব্যবহার করার সময় কত ধরনের সমস্যা বেরতে থাকে, কিভাবে সেগুলি সমাধান করতে হয়। চাকরী দেয়ার সময় কেন ৫-১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় জেনে যাবেন দ্রুতই।
বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে কম্পিউটারের ব্যবহার সাধারনভাবে ব্যক্তিপর্যায়ে সীমাবদ্ধ। গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন কাজগুলিকে উদাহরন হিসেবে দেখতে পারেন। কাজের সুযোগ থাকায় এই দিকগুলি অনেকটা এগিয়েছে। এগোয়নি ডাটাবেজভিত্তিক কাজ। অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সেটাই প্রয়োজন। একসময় অনেকেই এদিকে এগিয়ে এসেছিলেন। ব্যবসার হিসেবপত্র থেকে শুরু করে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং পদ্ধতি পর্যন্ত চালু করা হয়েছিল। তারপরই বিষয়টি উল্টোদিকে যাত্রা শুরু করেছে। ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা সম্ভব কম্পিউটার পদ্ধতি ব্যবহার করতে, কারন তাদেরকে সরকারের কথা শুনতে হয়। কিন্তু একটা দেশকে ডিজিটাল বলার জন্য এটা যথেষ্ঠ না। সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় আনা প্রয়োজন। এজন্যই প্রয়োজন লক্ষ লক্ষ প্রোগ্রামার।
সে পথ বন্ধ রয়েছে অবাধ পাইরেসির কল্যানে। ব্যবহারকারী যতক্ষন বিনে পয়সায় সফটওয়্যার পাবেন, যতক্ষন নিজের জন্য তৈরী সফটওয়্যারের দিকে না যাবেন ততদিন প্রোগ্রামার কাজের সুযোগ পাবেন না। এবং দক্ষ প্রোগ্রামার হবেন না। দেশও ডিজিটাল দেশ হবে না।
No comments:
Post a Comment