বর্তমানে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। আগামী বাজেটে এই কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে মোবাইল সিমপ্রতি ৮০০ টাকা কর দিতে হয় মোবাইল অপারেটরদের, সেটাও বাতিল করার প্রস্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটানোর জন্য এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ, জনসংখ্যার ১ শতাংশের কম। এই সীমিত সংখ্যক ব্যবহারকারীদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিপুল পরিমান টাকা গুনতে হয় নামমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য। একদিকে ইন্টারনেটের গতির কারনে ওয়েবপেজ ওপেন করা কষ্টকর, অন্যদিকে এজন্য খরচ বেশি, দুটিই মানুষকে নিরুতসাহিত করে ইন্টারনেট ব্যবহারে। অন্যদেশে মাসে ১০ ডলার ব্যয়ে যে গতি ব্যবহার করা যায় বাংলাদেশে সেই পরিমান গতি পেতে সরকারের হিসেবেই ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। এনিয়ে সরকার এবং আইএসপিদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। আইএসপির বক্তব্য ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের জন্য সরকারকে বহু টাকা দিতে হয়, সরকারের বক্তব্য ব্যান্ডউইডথের খরচ অনেক কমানো হয়েছে তারপরও দাম কমেনি কিংবা সেবার মান বাড়েনি। তারা বেশি লাভের কারনে ইচ্ছে করে পুরো ব্যন্ডউইডথ ব্যবহার না করে এমন অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের এই উদ্দ্যোগ কতটা মানুষের কাজে আসে সেটা নির্ভর করে দুপক্ষের ওপরই। সরকারের বক্তব্য যদি ঠিক হয় তাহলে আইএসপিগুলির কে কি পরিমান স্পিড দিতে সক্ষম, কত টাকা নিতে পারে এবিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা উচিত।
বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহার কম হওয়ার পেছনে আরো যে কারনগুলি রয়েছে সেগুলির দিকেও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেন করা যায় না, ব্যবসা করা যায় না, এমনকি আউটসোর্সিং এর কাজ করেও অর্থ পাওয়া যায় না। ভারতের নাগরিক কাজ করে যেখানে স্থানীয় ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উঠাতে পারেন সেখানে সরকার পে-পল এর মত ব্যবস্থাগুলি বন্ধ করে রেখেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বহু মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় করতে আগ্রহি। দেশে কয়েক কোটি মানুষ বেকার, যারা বর্তমানে পড়াশোনায় ব্যস্ত তাদের সামনেও কর্মসংস্থান বড় প্রশ্ন। আগামীতে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাওয়ারই সম্ভাবনা। সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যদি কেউ নিজে করে নিতে চায় তার সমস্যাগুলি দুর করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে শতকোটি-হাজারকোটি টাকার দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার এসব সাধারন ঘটনা। অন্যদিকে যে ব্যক্তি কাজ করে ৫০০ ডলার আয় করতে চায় তাকে সবধরনের বাধার সম্মুখিন হতে হয়। মানুষের সামনে ইন্টারনেট ভালকাজে ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় তার অপব্যবহার হচ্ছে। ইদানিংকালে এমন বহু ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে যা মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে আতংকিত করে। অথচ সব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যতবেশি মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারে উপকৃত করা যায় সেদিকে। সেইসাথে ইন্টারনেট কিভাবে মানুষের উপকারে আসতে পারে তা সেখানো হচ্ছে।
জনগনের সত্যিকারের প্রয়োজনের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে এধরনের ভ্যাট-কর প্রত্যাহার কতটা কাজে সুফল বয়ে আনবে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।
No comments:
Post a Comment