প্রথমেই মানের বিষয়টি দেখে নেয়া যাক। অন্য সবকিছুর মত এখানেও সরল সত্য হচ্ছে মান যত ভাল দাম তত বেশি। কাজেই যদি অর্থের বিষটি গুরুত্বপুর্ন না হয় তাহলে দামী ক্যামেরার দিকে যাওয়াই ভাল। অর্থাৎ এসএলআর।
ছবির মান সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে সেন্সরের ওপর। যে ক্যামেরার যত ভাল তার সেন্সর তত বড়। ৩৫মিমি সেন্সরকে বলে ফুল ফ্রেম সেন্সর। এই সেন্সর ফিল্মের সমান এবং ধরে নেয়া হয় এতে ফিল্মের মত মান পাওয়া যাবে। উদাহরন হিসেবে নাইকন ডি-৭০০, ডি-৩ এস, ডি-৩ এগুলি ফুলফ্রেম ক্যামেরা। এগুলির দাম ২০০০ ডলারের ওপরে।
(ফুলফ্রেমের চেয়েও বড় সেন্সরের ক্যামেরা পাওয়া যায়। একে বলা হয় মিডিয়াম ফরম্যাট ক্যামেরা। তবে আপনি নিশ্চয়ই ২০ হাজার ডলারের ক্যামেরা কিনতে যাচ্ছেন না।)
ফুলফ্রেমের পরই কিছুটা ছোট সেন্সর ব্যবহার করা হয় মিড-রেঞ্জ এসএলআর ক্যামেরায়। বলা হয় এপিএস-সি সেন্সর। যেমন নাইকনের ডি-৩০০এস, ডি-৯০ ইত্যাদি। এই লেভেলের ক্যামেরার দাম সাধারনভাবে ১০০০ ডলার থেকে ২০০০ ডলারের মধ্যে।
এর পরের লেভেল হচ্ছে এন্ট্রি লেভেল এসএলআর, কমদামী এসএলআর। সাধারনত ৫০০ থেকে ১০০০ ডলারের মধ্যে পাওয়া যায় এধরনের ক্যামেরা। এগুলিকে বলা মাইক্রো ফোর-থার্ড সেন্সর (ফুল ফ্রেমের চারভাগের তিন ভাগ)। যেমন নাইকনের ডি-৫০০০।
এই হিসেব পুরোটাই এসএলআর ক্যামেরার। সাম্প্রতিককালে মাইক্রো ফোর-থার্ড সেন্সর ব্যবহার করে ছোট আকারের ক্যামেরা পাওয়া যায়। প্যানাসনিক, অলিম্পাস, স্যামসাং এদের ক্যামেরা বেশ জনপ্রিয়। এর সুবিধে হচ্ছে সেন্সরের কারনে এসএলআর মানের ছবি পাওয়া যাবে, এসএলআরের মত লেন্স পাল্টানো যাবে, এসএলআরের মিরর বাদ দেয়ার কারনে আকারে ছোট, এবং হাল্কা। ছোট আকারের ক্যামেরা যদি সুবিধাজনক মনে হয় তাহলে এগুলি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এগুলির দাম এন্ট্রি লেভেল এসএলআরের থেকে বেশি। অন্তত এখন পর্যন্ত।
এরচেয়ে ছোট সেন্সর ব্যবহার করা হয় কম্প্যাক্ট ক্যামেরাগুলিতে। এগুলিকে বলা হয় অল-ইন-ওয়ান ক্যামেরা। সুপারজুম ক্যামেরাগুলিতে খুব কাছ থেকে বহু দুরের ছবি উঠানো যায়, (যেখানে এসএলআর ব্যবহার করে একাজ করতে পৃথক লেন্স প্রয়োজন হবে)। বর্তমানের সব ক্যামেরাতেই ভিডিও করা যায়। সবচেয়ে উচু মানের ক্যামেরাগুলির দাম ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার। নাইকনের পি-১০০ এই ধরনের ক্যামেরা।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করার, যদি দুরের ছবি তোলা প্রয়োজন হয়, পাখির ছবি উঠানোর শখ থাকে তাহলে কমদামের মধ্যে এগুলি ভাল ক্যামেরা।
এর পরের লেভেলে রয়েছে পকেট সুপারজুম কম্প্যাক্ট ক্যামেরা। এগুলি আকারে কিছুটা ছোট, দাম কিছু কম এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে জুম রেঞ্জ সুপারজুম থেকে কম। কোন কোন ক্যামেরা পকেটে নিয়ে বেড়ানো যায়।
এর পরে রয়েছে একেবারে সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরা। সাধারনত ৪এক্স জুম পর্যন্ত হয়ে থাকে এগুলি। পরিবারের ছবি উঠানোর জন্য এগুলি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এগুলির ব্যবহার সবচেয়ে সহজ। সীমাবদ্ধতা, দুর থেকে ছবি উঠানো যাবে না।
এরপর বাকি থাকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা। একটা মোবাইল ফোন পকেটে রাখতে হয়। তারসাথে যদি ক্যামেরা থাকেই তাহলে পৃথক ক্যামেরা বয়ে বেড়ানোর ঝামেলা করতে হয় না। আর বলার অপেক্ষা রাখে না, এগুলির সেন্সর সবচেয়ে ছোট। কাজেই অমুক মোবাইলে খুব ভাল ক্যামেরা আছে একথা যতই বলা হোক, পৃথক ক্যামেরার সাথে তুলনা চলে না।
হয়ত লক্ষ্য করেছেন একমাত্র সেন্সর বিষয়টিকেই উল্লেখ করা হয়েছে। সবচেয়ে প্রচারিত এবং পরিচিত মেগাপিক্সেল বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
মেগাপিক্সেল বিষয়টিকে যত গুরুত্বপুর্ন মনে করা হয় আসলে ভাল ছবির জন্য তত গুরুত্বপুর্ন না। মেগাপিক্সেল বেশি হলে ছবির সাইজ বড় হয়। যদি বড় আকারের ছবি প্রিন্ট করা প্রয়োজন হয় অথবা নির্দিষ্ট কারন থাকে কেবলমাত্র তখনই আরো বেশি মেগাপিক্সেলের দিকে পৃথকভাবে দৃষ্টি দিতে পারেন। সাধারনভাবে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ৩ মেগাপিক্সেল, সাধারন ক্যামেরার ক্ষেত্রে ১০ মেগাপিক্সেল যথেষ্ট হতে পারে।
ক্যামেরার ভালমন্দ আরো অনেককিছুর ওপর নির্ভর করে অবশ্যই। যেমন ক্যামেরার ইমেজ প্রসেসর, লেন্স, কানেকটিভিটি এবং অন্যান্য ফিচার, ডিজাইন ইত্যাদি। নতুন ব্যবহারকারীর জন্য পরামর্শ হচ্ছে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ইন্টারনেটে মডেলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
No comments:
Post a Comment