May 3, 2009

ডিজিটাল ক্যামেরার যতকিছু : All about Digital Camera

ফিল্ম ক্যামেরায় ছবি উঠানো হয় ফিল্মে, ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি জমা হয় মেমোরীতে। এরপর ছবিগুলি কম্পিউটারে কপি করুন, পরিবর্তন করুন, কোন সমস্যা থাকলে ঠিক করুন, প্রিন্ট করুন, ইমেইল করুন, এমনকি ক্যামেরা থেকে সরাসরি প্রিন্ট করুন বা ইন্টারনেটে পাঠান। সবকিছুই করা যায়। কাজেই ফিল্ম ক্যামেরার চেয়ে ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার সহজ এবং খরচ কম। ভাবছেন এই কথায় নতুন কি আছে। এতো সবাই জানে। আপনি হয়ত পরিস্কারভাবে জানেন না ডিজিটাল ক্যামেরা কত ধরনের হয়, সুবিধা-অসুবিধা কি, ক্যামেরার ভালমন্দ কিভাবে চিনতে হয়, কোন ধরনের কাজের জন্য কেমন ক্যামেরা প্রয়োজন। অথবা ক্যামেরা কিনতে চান অথচ ঠিক করতে পারছেন না কোনটা কিনবেন। এই বিষয়গুলি তুলে ধরার জন্যই এই লেখা। এখানে একমাত্র ডিজিটাল ক্যামেরার কথাই বলা হয়েছে, কাজেই ফিল্ম ক্যামেরাকে বিবেচনায় আনবেন না।

প্রথমেই দেখা যাক ক্যামেরার ধরন। ক্যামেরাকে দুভাগে ভাগ করা হয়, একটি পয়েন্ট এন্ড শুট (Point and Shoot), অপরটি সিংগেল লেন্স রিফ্লেক্ট (Single Lens Reflect) সংক্ষেপে এসএলআর। অনেক সময় ফিল্ম ক্যামেরা থেকে পৃথক করার জন্য লেখা হয় dSLR. দুটি ভাগের প্রথমটির নামের অর্থ আপনি যার ছবি তুলতে চান তারদিকে ক্যামেরা তাক করুন এবং ক্লিক করুন। কাজ এটুকুই। এতে ক্যামেরার পর্দায় বা ভিউফাইন্ডারে (ইলেকট্রনিক) যা দেখতে পাচ্ছেন তার ছবি পাবেন। পরের ক্যামেরার নামের পার্থক্য এই দেখার বিষয়টি নিয়েই। এখানে পর্দায় বা ভিউফাইন্ডারে (অপটিক্যাল) যা দেখতে পান সেটা আসে ক্যামেরার লেন্স এবং সেন্সর হয়ে। ফলে আপনি ছবি উঠানোর আগে যা দেখছেন এবং পরে যা পাবেন দুয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রধান পার্থক্য এটিই।

তবে আরো পার্থক্য রয়েছে। যে কারনে পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার তুলনায় এসএলআরের দাম অনেক বেশি হয়। এসএলআরের লেন্স অনেক উন্নত, সেন্সরের আকার অনেক বড় (সেন্সরকে ফিল্মের আকারের সাথে তুলনা করতে পারেন। ৩৫মিমি ফিল্মের সমান আকৃতির সেন্সরকে বলাহয় ফুল ফ্রেম সেন্সর), ভাল ছবির জন্য প্রয়োজনিয় সব ধরনের বিষয় নিয়ন্ত্রন করার ব্যবস্থা রয়েছে, ইচ্ছে করলেই এক লেন্স খুলে আরেক লেন্স ব্যবহার করা যায়। যদিও দুয়ের পার্থক্য এখন অনেকটা কমেছে। পয়েন্ট ওন্ড শুট ক্যামেরাতেও এখন লেন্স পাল্টানো যায় (প্যানাসনিক জি-১), অনেক ক্যামেরাতেই সব ধরনের ম্যানুয়েল কন্ট্রোল দেয়া হয়েছে, ছবির মান বাড়ানোর জন্য সেন্সরের আকারও বড় করা হয়েছে। তারপরও প্যানাসনিকের জি-১ কে পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা বলা হয়।

আকারের দিক থেকে ক্যামেরাকে বলা হয় তিন ধরনের। পকেট, মাঝারী এবং বড়। পকেট ক্যামেরা একটি মোবাইল ফোনের চেয়েও ছোট হতে পারে। এর প্রধান সুবিধা সবসময় সাথে করে বয়ে বেড়ানো যায় এবং ছবি উঠানোর বিষয় সামনে দেখলেই ছবি উঠানো যায়। অনেক মোবাইল ফোন এই কাজ করে দিতে পারে। মাঝারি আকারের ক্যামেরা কোটের পকেটে নেয়া সম্ভব হলেও সার্টের পকেটে নিতে পারবেন না। আর বড় ক্যামেরা ব্যাগে করে নিতে হবে। সাধারনভাবে এসএলআর ক্যামেরাগুলি তৃতিয় ভাগের। এগুলি আকারে যথেষ্ট বড়। আর যদি বিভিন্ন ধরনের ছবি উঠানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন লেন্স থাকে তাহলে বড় আকারের ব্যাগ প্রয়োজন হবে।

কাজের ধরন অনুযায়ি যদি ক্যামেরা বেছে নিতে হয় তাহলে কোন ধরনের ক্যামেরা বেছে নেবেন ?

সব ধরনের কাজের জন্য এসএলআর সুবিধাজনক, যদি অতিরিক্ত খরচ, বড় আকার, বেশি ওজন ইত্যাদি বাড়তি বিষয়গুলি মেনে নিতে পারেন। অন্য ক্যামেরাগুলির দিকে বরং দৃষ্টি দেয়া যাক।

যদি পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুবান্ধবের, অনুষ্ঠানের ছবি উঠানোই প্রধান কাজ হয় তাহলে ছোট আকারের ক্যামেরা, ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স সুবিধাজনক। ওয়াই এঙ্গেল লেন্স বলতে সেটা দিয়ে কত কাছের ছবি উঠানো যাবে সেটা বুঝায়। বিপরীতভাবে জুম বলতে কত দুরের ছবি উঠানো যাবে সেটা বুঝায়। লক্ষ্য করলে দেখবেন প্রতিটি ক্যামেরায় মিলিমিটার হিসেবে এর উল্লেখ থাকে, যেমন ১৮-৫৫মিমি। ঘরের মধ্যে ছবি উঠানোর জন্য ১৮ মিমি কিংবা আরো কম হলে ভাল হয়, অন্যদিকে অপর মানটি যত বেশি হবে তত দুরের ছবি উঠাতে পারবেন। যেমন গাছে বসে থাকা পাখি, কিংবা গ্যালারীতে বসে খেলার ছবি। সাধারনত এক্স বলে জুমকে বুঝানো হয়। যেমন ৪এক্স বা ২০ এক্স (২০ এক্স প্রায় ৫৬০মিমি এর সমান)। আপনার যদি দুরের ছবি উঠানোই মুখ্য হয় তাহলে ২০এক্স কিংবা আরো বেশি জুমের ক্যামেরার দিকে দৃষ্টি দিতে পারেন। ক্যামেরায় অপটিক্যাল জুম কত সেদিকেই দৃষ্টি দেবেন এবং ডিজিটাল জুম বিষয়টিকে একেবারেই উপেক্ষা করে যাবেন। বাস্তবে এটি কোন কাজে আসে না।

যদি মাঝেমধ্যে ভিডিও করা প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা করা যায় কিনা, কোন রেজুল্যুশনে করা যায় দেখে নিতে পারেন। বর্তমানের অনেক ক্যামেরাতেই হাই ডেফিনিশন ভিডিও রেকর্ড করা যায়।

হয়ত লক্ষ্য করেছেন এখন পর্যন্ত মেগাপিক্সেল বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। কারন সাধারনভাবে একেই সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন মনে করা হলেও বাস্তবে এর গুরুত্ব খুব কম। ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যদি ৬ হয় তাতেই খুশি থাকতে পারেন। আর ১২ এর অধিক প্রয়োজন হবে না। এরচেয়ে বরং অন্য বিষয়গুলির দিকে দৃষ্টি দেয়া ভাল।

ক্যামেরার লেন্স কোন কোম্পানীর তৈরী সেটিও গুরুত্বপুর্ন বিষয়। নাইকন, ক্যানন, প্যানাসনিক (লেইকা), সনি (কার্ল জিস) ইত্যাদি কোম্পানীর লেন্সএর পরিচিতি রয়েছে ভাল হিসেবে।

কোন ধরনের ক্যামেরার দাম কেমন হতে পারে একটা ধারনা পেতে পারেন এখানে, সাধারন মানের ক্যামেরা ১০ থেকে ১৫ হাজার, ভাল মানের সুপারজুম (১৮এক্স থেকে ২৬ এক্স) এর দাম ২০ থেকে ৩৫ হাজার, আর এসএলআরের দাম ৩৫ হাজার থেকে কয়েক লক্ষ। সব ধরনের ক্যামেরাই ঢাকার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

যে ক্যামেরাই কিনুন, সেই ক্যামেরা সম্পর্কে আগে জেনে নিন। ইন্টারনেটে সার্চ করলে যে কোন মডেলের ক্যামেরার রিভিউ দেখে নিতে পারবেন। সেখানে ভাল-মন্দ সবকিছুই জানানো হয়। কে জানে, হয়ত আপনারও ছবি উঠানো শখ থেকে নেশা, নেশা থেকে পেশা হতে পারে।

No comments:

Post a Comment