গত জাতিয় নির্বাচনে বর্তমান সরকারের বিপুল ভোটে জয়লাভের কারন হিসেবে অনেকেই কারন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংগিকারকে। টেলিমেডিসিন সেবা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের ঘোষনা দিয়ে বর্তমান সরকার সেই প্রচারনা বজায় রেখেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্যনীয় বৈশিষ্ট হিসেবে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে ইন্টারনেটকে। সেপথে বাংলাদেশ কি সামনের দিকে যাচ্ছে ?
ওয়াইম্যাক্স চালু হওয়ার সময় অনেকেই আশায় বুক বেধেছিলেন, এতদিনে ইন্টার গতির একটা হিল্লে হল। কমপক্ষে ১২৮ কেবিপিএস, কাজের জন্য যথেষ্ঠ। পত্রিকায় গর্বের সাথে ছাপা হল ভারতের আগে আমরা ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু করেছি। (যদিও ফোরজি নামে আরেকটি নেটওয়ার্ক চালু রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশে এখনো থ্রিজি চালু হয়নি।)
ওয়াইম্যাক্সের ভ্রম ভাংতে বেশি দেরি হল না। ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ দেখে অনেকেই বললেন এটা অতিধনী শ্রেনীর জন্য। টাকা দিতে হবে কি পরিমান তথ্য লেনদেন করেছেন তার ভিত্তিতে। এবং সেই পরিমানও ইন্টারনেট গতির মতই দ্রতহারে।
কিছুদিন পর যখন দেখা গেল এই সেবা নেয়ার মানুষ জুটছে না তখন শুরু হল ডিজিটাল প্রতারনা। আকাশ সমান আনলিমিটেড লেনদেন। একথা ঠিক এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরিমানের বেশি টাকা গুনতে হয় না, কিন্তু ব্যবহারকারী কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে গেলেন সেই আনলিমিটেডের লিমিট তাদের হাতে। তারা ঠিক করবেন আপনার দেয়া টাকায় কতটুকু ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন। সেটা পেরিয়ে গেলেই গতি কমতে থাকবে, লাইন বন্ধ হবে। এটা হচ্ছে ফেয়ার ইউজ। কতটুকু ব্যবহার করা ফেয়ার সেটা ঠিক করার দায়িত্ব তাদের। আপাতত এই নিয়মেই চলছে দুই ফোরজি।
অনেকের আশা ছিল ওয়াইম্যাক্স চালু হলে প্রতিযোগিতা বাড়বে, ফলে জিপিআরএস-এজ নামে যা চালূ আছে আরো আগে থেকে তাদের সেবার মান বাড়বে, দাম কমবে। সে আশার গুড়ে বালি।
একসময় গ্রামীনের বিজনেস সলুশন পি২ নামের সেবায় ইন্টারনেটের গতি ১০ থেকে ২৫ কিলোবাইটের মধ্যে থাকত। মাসে প্রায় হাজার টাকায় আনলিমিটেড এই সেবায় অনেকেরই চলে যেত। মাস দুয়েক ধরে তার ব্যবহারকারীরাও লক্ষ করলেন টাকা কমা তো দুরের কথা, গতি বাড়া মহাদুরের কথা বরং তা কমে ২/৩ কিলোবাইটে নেমে এসেছে। ইমেইল দেখতে হয় বেসিক এইচটিএমএল মোডে। অভিজ্ঞতা থেকে একসময় তারাও টের পেলেন, এটা আসলে ওই ফেয়ার ইউজের ফল। তারাও ফেয়ার ইউজ পদ্ধতি চালু করেছেন আপনাকে না জানিয়েই। মাসের ২৫ দিন ফেয়ার ইউজ আর বাকি কদিন আগের নিয়ম।
একে বলা হয় পোষ্টপেইড। মাসে মাসে আপনার নামে বিল আসবে, আপনি নির্দিষ্ট সময়ে সেটা দিয়ে দেবেন। সেই নিয়মও পাল্টে গেছে। একসময় লাইন কাজ করে না দেখে খোজ করে জানলেন বিল দেবার সময় যেদিন বিল তৈরী হয় সেদিন। বিল তৈরীর সাথেসাথে বিল না দেয়ায় লাইন বন্ধ। কাজেই বিল হাতে পাওয়ার কমপক্ষে দুদিন আগে মনে করে সেটা দিয়ে দেবেন। বিল দিন, কাছে থাকুন।
তারপর লক্ষ্য করলেন সেই নিয়মও কাজ করে না। আবারও খোজ করলেন। এবারে জানা গেল মাসের হিসেব বলে কিছু নেই, সেটা দিনের হিসেবে পরিনত করা হয়েছে। যেদিন আপনার জমা টাকা শেষ হবে সেদিনই লাইন বন্ধ। যদিও এখনও এর নাম পোষ্ট পেইড।
আর প্রয়োজন হলে ফোন করে খোজ নেবেন ?
যদি সত্যিসত্যিই প্রয়োজন হয় তাহলে ফোন করার আগে বিলের কাগজে আরেকবার ভাল করে নজর বুলিয়ে নিন। আপনাকে না জানিয়েই তাদের সেবার জন্য নাম্বার ১২১ এর পাশে ব্রাকেটে লিখে দেয়া হয়েছে, প্রতি মিনিটে সেজন্য ১ টাকা ১৫ পয়সা করে কেটে নেয়া হবে। অকারনে বিরক্ত করবেন না।
সত্যিই, সবকিছু দেশকে দ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিনত করছে।
আমেরিকায় সরকার থেকে বলা হয়, সেবাদানকারী যে কথা বলে এবং যে সেবা দেয়া তারমধ্যে পার্থক্য থাকলে অভিযোগ করুন। ইন্টারনেটের গতি তাদের প্রচারনার গতির থেকে কম হলে এফসিসিকে জানান। প্রয়োজনে তাদের ওয়েবসাইট থেকে গতি মাপার সফটঅয়্যার ডাউনলোড করে নিন। এধরনের অভিযোগের ফল কি হয় সেটা আমেরিকায় যারা ব্যবসা করেন তারা খুব ভাল করেই জানেন।
আমরা নিশ্চয়ই আমেরিকায় বাস করি না। বাস করি ঠিক বিপরীত দিকে।
No comments:
Post a Comment