আমাদের গর্ব করার বিষয়ের অভাব নেই। বাঙালী জাতির ইতিহাস হাজার বছরের। গঙ্গারিডি বিষয়কে হিসেবে ধরলে দ্বিগুণেরও বেশি। আর উপমহাদেশ ধরে করে মহেঞ্জেদারো হিসেব করলে তারও দ্বিগুন। এত প্রাচীন ঐতিহ্য থাকলে গর্ব করব না কেন ? আর আমরা শুধু প্রাচীন বিষয় নিয়েই যে গর্ব করছি তাতো না, বর্তমান নিয়েও গর্ব করি। সুন্দরবনকে ভোট দিয়ে বিশ্বসেরা বানাবোই বানাবো। সুন্দরবনের ভেতরে গাছ কেটে পরিস্কার হয়ে গেছে, প্রতিনিয়ত হচ্ছে, তাতে কি যায় আসে! কেউ তো ভেতরে দেখতে যাচ্ছে না।
এটা প্রযুক্তি বিষয়ে ব্লগ। কাজেই ওসব অপ্রয়োজনীয় আলাপ বাদ থাক। প্রযুক্তির কথাই বলা যাক। একেবারে তথ্য প্রযুক্তি। এরই ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যত। কিছুদিনের মধ্যেই দেশ দরীদ্র থেকে মধ্যম আয়ের দেশে, চাইকি ধনী দেশে পরিনত হবে। আউটসোর্সিং এর গুনে।
এরই প্রথম পদক্ষেপ গার্টনারের তালিকায় বাংলাদেশের নাম। বিশ্বসেরা ৩০ দেশের তালিকায় নাম উঠেছে বাংলাদেশের। এশিয়ার মধ্যে নবম। গর্ব করব না কেন। মন্ত্রীসহ বেসিসের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠান করে দেশবাসিকে সুখবর শুনিয়েছেন।
গার্টনারের তালিকার ভেতরের তথ্য একটু দেখে নেয়া যাক। মুল বিবেচ্য বিষয় ১০টি। এরমধ্যে সবচেয়ে ভাল করেছে কাজের ব্যয়। খুবই ভাল।
তা-তো বটেই। এদেশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাধার খাটুনি খাটিয়ে গার্মেন্টস কর্মীর বেতন বাকি রাখা যায়। সেটা পাওয়ার জন্য তাদের পথে নেমে পুলিশের ডান্ডা খেতে হয়। তারা দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করছে, বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে, ষড়যন্ত্র করছে, গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। গার্মেন্টস মালিকদের বক্তব্য একেবারেই পরিস্কার, সস্তায় করে দেই বলেই তো আমরা কাজ পাই।
কাজেই সস্তার কারনে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং এর কাজ পাবে এতে সন্দেহ কি! যদি প্রশ্ন করেন গার্মেন্টস শ্রমিকের মত আইটি শ্রমিককে কি ধরে এনে চাকরী দেয়া হবে কিনা, বেতন সময়মত না পেলে তারাও কি ঘাড় নিচু করে পড়ে থাকবে কিনা, এর উত্তর দেয়া আমার পক্ষে শক্ত। এটুকু জানাতে পারি, উন্নত বিশ্বেও আইটি বিষয়ে দক্ষ মানুষের সংকট রয়েছে। সেকারনেই তারা দরীদ্র দেশের দিকে নজর দেয়। বিষয়টি কায়িক পরিশ্রমের না। আর এই ক্ষেত্রে কর্মস্থান বদলের হার সবথেকে বেশি। সেটা সত্য হলে সামান্য কারনেই তারা এইসব আইটি শিল্পের মালিককে (ধরে নেয়া যায় গার্মেন্টস ব্যবসার চেয়ে লাভজনক ভেবেই সেদিকে পা রাখবেন) পথে বসিয়ে সরে যেতে পারেন।
গার্টনারের অন্য তথ্যগুলি দেখা যাক। একেবারে সেরা ওই একটিই। এরপর মোটামুটি ভালর তালিকায় রয়েছে সরকারী সহায়তা, জনশক্তি, শিক্ষা পদ্ধতি, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ, আইনগত সুবিধে ইত্যাদি।
আর স্বাভাবিক মানের থেকে নিচুতে রয়েছে ভাষা, অবকাঠামো, তথ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি।
একেবারেই সামান্য কারন। মোটে তিনটে।
যিনি কাজ দেবেন তিনি যদি অন্ধ না হন তাহলে তার দৃষ্টি সম্ভবত নিচের দিক থেকেই শুরু হবে। দোকানে দিয়ে সবচেয়ে কমদামী কি আছে এমন কথা তিনি বলবেন না। তার প্রধান প্রশ্ন হবে ৩টি,
. তার তথ্য কি নিরাপদ থাকবে ?
. যাকে কাজ দেবেন তার কি সেটা করার ব্যবস্থা আছে ? নাকি সাবমেরিন কেবল সমস্যা – লোডসেডিং এর কবলে পড়তে হবে ?
. তাদের সাথে কি কথা বলা যাবে ? নাকি তাদের ভাষা শিখতে হবে ?
এই ৩টি বিষয় নিশ্চিত থাকলে খোজ নেয়া যায় তারা কত কমে করে দিতে পারে।
আমাদের সমস্যা ওই সামান্য ৩টি বিষয়েই। আমরা অনায়াসে ভারতের সাথে তুলনা করে বলি আমরাও ব্যাঙ্গালুরু-চেন্নাইকে ছাড়িয়ে যাব। জানা প্রয়োজন মনে করি না তাদের কপিরাইট আইনের ব্যবহার, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থাকে। শিক্ষা প্রসংগে একটু তথ্য দিতে পারি, ভারতে প্রতিবছর কম্পিউটার সাইন্সে গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভের সংখ্যা আমেরিকার থেকে বেশি। এমনকি পিএইচডি লাভের সংখ্যাও।
বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা সরকারী হিসেবে আড়াই কোটি। কারো কারো হিসেবে সেটা ৫ কোটি ছুই ছুই। এদের বড় একটি অংশ শিক্ষিত। অন্যদিকে যারা নিয়োগ দেন তারা বলছেন, আমরা যোগ্য মানুষ পাই না।
দুটি বিষয় এক করলে যা দাড়ায় তা হচ্ছে, মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু যোগ্য হচ্ছে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, যে শিক্ষক ছাত্রের ঘাড় মটকে কোচিং সেন্টারে এনে টাকা আদায় করছেন সেই শিক্ষক কি শিক্ষা দেবেন ? কিভাবে অন্যের ঘাড় মটকাতে হয় ?? যে প্রতিস্ঠান টাকা নিয়ে বিদেশি সার্টিফিকেট বিক্রি করছে তার কাছেই বা কি শেখার আছে ?
ইন্টারনেট চলে ফেল কড়ি মাখ তেল নিয়মে। হাজার টাকা বিল দিলেই ইমেইল ব্যবহার করা যএব একথা কে বলেছে ? আরো টাকা ঝাড়ুন। এটা ফেয়ার ইউজের দেশ। সবকিছু ফেয়ার।
এসব অকারন প্রলাপ। কে শুনতে যাচ্ছে ? থাকগে ওসব কথা-
আমরা গর্ব করতে পছন্দ করি। উচুতে উঠতে পছন্দ করি। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, যদি তলানী না থাকে তাহলে একসময় আছাড় খেতে হয়। এটাই যা সমস্যা। একেবারে সামান্য সমস্যা।
No comments:
Post a Comment