ভাল ছবির জন্য ভাল ক্যামেরা প্রয়োজন, একেবারে সাদামাটা সত্য। সাথে আরো সত্য এই যে ক্যামেরা যত ভাল দাম তত বেশি। তেল কম অথচ মচমচে, ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে একথা খাটে না। কাজেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় পকেটের সামর্থ্য বিবেচনা করে। দাম সম্পর্কে একটু ধারনা পাওয়া যেতে পারে এখান থেকে, নাইকন ডি৩এক্স ক্যামেরার দাম ৮০০০ ডলার। অনেকের মতে সাধারন ক্যামেরা এরচেয়ে ভাল হয় না (অসাধারন ক্যামেরা বলে একটি বিষয় থেকে যায়, তার দাম এরও কয়েকগুন বেশি)। আর একেবারে কমদামী ক্যামেরার দাম ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার।
এখানে এসএলআর ক্যামেরার কথা বলা হচ্ছে। নিজেকে যদি ফটোগ্রাফার হিসেবে পরিচয় দিতে আগ্রহী হন তাহলে এটা প্রয়োজন। যত কমদামীই হোক, এসএলআর হতে হবে।
এসএলআরের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে এতে ইচ্ছেমত লেন্স পাল্টানো যায়। যার অর্থ এক লেন্স ব্যবহার করবেন না একাধিক লেন্স ব্যবহার করবেন সেটা আপনার ইচ্ছে এবং প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে। লেন্সের মাপের ওপর নির্ভর করে আপনি কত কাছের বা দুরের ছবি উঠাতে পারবেন। লেন্সের মাপ কি সেটা দেখে নেয়া যাক।
এটা প্রকাশ করা হয় মিলিমিটারে, এবং তুলনা করা হয় ৩৫ মিলিমিটার ফিল্ম ক্যামেরার সাথে। অধিকাংশ লেন্সে কাছে এবং দুরে ফোকাস করার ব্যবস্থা থাকে। যদি লেন্সের গায়ে লেখা থাকে ১৮-৫৫ মিমি, তার অর্থ আপনি সবচেয়ে কাছে ১৮ মিলিমিটার এবং সবচেয়ে দুরে ৫৫ মিলিমিটার লেন্সের ফল পাবেন। ১৮ মিলিমিটারে আপনি অনেক বেশি যায়গা ফ্রেমের মধ্যে পাবেন, ৫৫ মিলিমিটারে যায়গা কমে যাবে এবং তা বড় আকারে ধরা পরবে। ক্যামেরার ভাষায় একে বলে এঙ্গেল পরিবর্তন। কম মিলিমিটারের লেন্স ব্যবহার করলে বড় (ওয়াইড) এঙ্গেল পাওয়া যাবে, বেশি মিমি ব্যবহার করলে (টেলি) ছোট এঙ্গেল পাওয়া যাবে। ওয়াইড এঙ্গেলের সুবিধা হচ্ছে এতে বেশি যায়গা স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়, যেমন ফসলের মাঠ, বাগান, আকাশ ইত্যাদি। আর টেলি’র সুবিধা হচ্ছে দুরের ছবি উঠানো যায়। যেমন গাছে বসে থাকা পাখি। সাধারনত ১৮ মিলিমিটারকে ওয়াইড এঙ্গেলে জন্য ষ্টান্ডার্ড ধরে নেয়া হয়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এরচেয়ে কম মিমি লেন্স প্রয়োজন হয় না। ষ্টান্ডার্ড টেলি’র জন্য ৫৫ বেশি ব্যবহৃত হয়। এরচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলে পৃথক লেন্সে কথা ভাবতে হয়। সেকথা বলার জন্যই এই ভুমিকা প্রয়োজন হল।
আপনি ১৮-৫৫ লেন্সের সাথে ৭০-২০০ মিমি লেন্স কিনলে আপনার দু’লেন্স মিলে হচ্ছে ১৮-২০০ মিমি। মাঝখানের যায়গাটুকু নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। অর্থাৎ আপনার প্রয়োজন হচ্ছে দুটি লেন্স। আবার দুই লেন্সের বদলে একটি ১৮-২০০ মিমি লেন্সও কিনতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে খরচ কমবে। এ হিসেব করে নিতে হবে কেনার আগেই।
সাধারনত দামী ক্যামেরা বিক্রি হয় লেন্স ছাড়া, কমদামী ক্যামেরা বিক্রি হয় ১৮-৫৫ লেন্স সহ। মধ্যম সারির ক্যামেরার মধ্যে নাইকনের ডি-৮০ বিক্রি হয় ১৮-১৩৫ মিমি লেন্স সহ, ডি-৯০ বিক্রি হয় ১৮-১০৫ মিমি লেন্স সহ, ক্যানন ৪০ডি/৫০ডি বিক্রি হয় ১৭-৮৫ মিমি লেন্স সহ। এছাড়া অনেক কোম্পানী শুধু লেন্সই তৈরী করে বিভিন্ন ক্যামেরার জন্য। যেমন ট্যামরন এর তৈরী লেন্স ক্যানন, নাইকন, প্যানাসনিক ইত্যাদিতে ব্যবহার করা যায় (অবশ্যই কেনার সময় দেখে নিতে হবে সেটা কোন ক্যামেরার জন্য)। এগুলির দাম তুলনামুলক কম কিন্তু কোন কোন লেন্স ক্যামেরা কোম্পানীর লেন্সের চেয়েও ভাল কাজ করে।
মুল বক্তব্য হচ্ছে, কোন লেন্সে আপনার কাজ চলবে সেটা আগে জেনে নিন, তারপর কিনুন। লেন্স দুটি, না দুইয়ের বদলে একটি।
৩০০ মিমি লেন্স কেনার পরও হয়ত দেখলেন সেটা দিয়ে আপনার প্রয়োজন মিটছে না। আপনি যত দুরের ছবি উঠাতে চান সেটা এই লেন্সের সাধ্যের বাইরে। সেক্ষেত্রে জুম কনভার্টার নামে আরেক ধরনের লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। একে ক্যামেরা এবং লেন্সের মাঝখানে লাগাতে হয়। ২এক্স কনভার্টার ব্যবহার করলে লেন্সের দুরত্ব দিগুন হবে।
আপনি হয়ত একটা মৌমাছির মাথার ছবি উঠাতে চান (ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি), যা আপনার লেন্স ধারন করতে পারে না। এজন্য এক্সটেনশন টিউব নামে একধরনের টিউব পাওয়া যায়। এর কাজ ক্যামেরা এবং লেন্সের দুরত্ব বাড়িয়ে দেয়া। এটা লেন্সের মতই, ভাল টিউবের সাথে মিটার থাকে, অটোফোকাস কাজ করে। ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে আগ্রহি হলে এটা কিনতে পারেন।
ভাল ছবির জন্য ক্যামেরার সাথে আরেকটি জিনিষের কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। ক্যামেরা রাখার জন্য ষ্ট্যান্ড। সাধারনত টিন-পা অলা ট্রাইপড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। ছবি উঠানোর সময় আপনার হাত সামান্য কেপে গেলে তার ফলে ছবি ঝাপসা হবে। বিশেষ করে দুরের ছবি উঠানোর সময়, অথবা অল্প আলোতে ছবি উঠানোর সময় (যখন বেশি সময় ধরে এক্সপোজার দিতে হয়)। খুব অল্প দামেই ট্রাইপড কিনতে পাওয়া যায়। মনোপড নামে এক-পা অলা ষ্ট্যান্ডও ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে যাওয়ার সময় এগুলি সহজে বয়ে নেয়া যায়।
No comments:
Post a Comment